বাংলা-টিউটর
সাইটে ডোমেন, হোষ্টিং, ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ নিয়ে অনেক বিষয় উল্লেখ করা
হয়েছে। সাধারনভাবে এই বিষয়গুলি ঠিক কি উল্লেখ করা হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে,
এগুলি প্রাথমিক বিষয় হলেও বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শেখার সুযোগ কম।
সেকারনে বিষয়গুলি অনেকের কাছে ততটা স্পষ্টভাবে বোঝার ব্যাবস্থাও নেই। খুব
সহজেই ভুল বোঝার সম্ভাবনা থেকে যায়।
এই বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারনা দেয়া হচ্ছে এখানে।
ডোমেন এবং রেজিষ্ট্রেশন
ডোমেনকে
ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা দুইই বলতে পারেন। যে শব্দ ব্যবহার করে সাইটের
পরিচয় সেটাই ডোমেন। একই নামে একাধিক ওয়েবসাইট থাকতে পারে না। এই বিষয়টি
নিশ্চিত করতে ডোমেন নিয়ন্ত্রন করে বিশেষ সংস্থা। আপনি সাইটের যে নাম
ব্যবহার করতে চান সেটা আপনাকে কিনতে হয় (টাকা দিয়ে) তাদের কাছে। এটাই ডোমেন
রেজিষ্ট্রেশন। কেনার পর প্রতি বছর সেই ডোমেন ব্যবহারের জন্য টাকা দিতে হয়।
এই পরিমান কমবেশি হয় বিভিন্ন কারনে। সাধারনভাবে বছরপ্রতি ২ থেকে ২৪ ডলার
পর্যন্ত (কিংবা আরো বেশি) দিতে হতে পারে। বিনা টাকায় নিজস্ব ডোমেন ব্যবহার
করার কোন সুযোগ নেই।
ধরুন একটি সাইটের ডোমেন mysite. এই নামের শেষে .com. .net, .edu, .org ইত্যাদি বিভিন্ন এক্সটেনশন থাকতে পারে। এক্সটেনশন অনুযায়ীও টাকা কমবেশি হয়। যেমন ডট কম এর দাম ডট এডু থেকে বেশি।
এই সাইটের নামটি লক্ষ করুন। deshitunes.blogspot.com
এর মাঝখানে ব্লগস্পট অংশটি মুল ডোমেন, বাংলা-টিউটর তার সাব-ডোমেন। একটি
ডোমেন এর অধিনে কতগুলি সাব-ডোমেন থাকবে সেটা নির্ভর করে সার্ভারের ওপর।
আপনার নিজস্ব ডোমেন এর সাথেও সাব-ডোমেন ব্যবহার করতে পারেন। সাব-ডোমেন এর
জন্য পৃথকভাবে রেজিষ্ট্রেশন প্রয়োজন হয় না।
বিনামুল্যের
হোষ্টিংগুলি (ব্লগার কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস) আপনাকে সাব-ডোমেন ব্যবহারের সুযোগ
দেয়। এর সুবিধে হচ্ছে আপনাকে ডোমেন রেজিষ্ট্রেশন কিংবা ফাইলগুলি রাখার
জন্য সার্ভারের খরচ দিতে হয় না। আর অসুবিধে হচ্ছে, আপনার পুরো স্বাধীনতা
নেই। তারা ইচ্ছে করলেই আপনার সাইট বন্ধ করে দিতে পারে। কোন কোন সেবা
(এফিলিয়েশন) ব্যবহারের সময় নিজস্ব ডোমেন না থাকলে অনুমতি দেয়া হয় না।
বিষয়টির
আরেকটি উদাহরন হতে পারে এমন। আপনি নিজের নামে ডোমেন রেজিষ্ট্রেশন করলেন,
হোষ্টিং সেবা কিনলেন। এখন ব্লগারে তৈরী ব্লগের সেটিংএ যদি সেই ডোমেন
ব্যবহার করেন তাহলে বর্তমান ব্লগস্পট থেকে সমস্ত ফাইল সেখানে চলে যাবে
(ব্লগার নিজেই সেটা করে দেয়)। সুবিধে হিসেবে আপনি একদিকে ব্লগার ব্যবহার
করছেন অন্যদিকে নিজস্ব ডোমেন-হোষ্টিং ব্যবহার করছেন। গুগলের ব্লগার ব্যবহার
করেও আপনি স্বাধীন, তারা আপনার সাইট মুছে দিলে আপনি তাদের নামে মামলা করতে
পারেন।
ওয়ার্ডপ্রেস,
জুমলা, দ্রুপল ইত্যাদির হিসেব কিছুটা ভিন্ন। এই সফটঅয়্যারগুলি
বিনামুল্যের। ডাউনলোড করে নিজের সাইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এরপর
তাদের সেখানে কোন নিয়ন্ত্রন নেই। ব্লগার থেকে পার্থক্য হচ্ছে, আপনি নিজস্ব
ডোমেনে ব্লগার ব্যবহার করলেও তারা যখনই সফটঅয়্যারে কোন পরিবর্তন আনবে
আপনাকে সেই পরিবর্তন ব্যবহার করতে হবে। সবসময়ই সেটা তাদের সার্ভার থেকে কাজ
করে। নিজস্ব ডোমেনে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারের সময় সেটা পুরোপুরি পৃথক
সফটঅয়্যার। বিনামুল্যের হোষ্টিং ভার্শন অবশ্য ব্লগারের মত।
হোষ্টিং
আপনার
ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা ফাইলগুলি এমন কোথাও রাখা প্রয়োজন যেখানে থাকলে
ইন্টারনেটে যে কোন যায়গা থেকে ব্যবহার করা যাবে। হোষ্টিং সার্ভিস নামের
একাজটি করে একধরনের প্রতিস্ঠান। তাদের সাথে চুক্তি করার সময় আপনি ঠিক করেন
সেখানে কত পরিমান (মেগাবাইট বা গিগাবাইট) যায়গা আপনি ব্যবহার করবেন, সেই
অনুযায়ী টাকা দিতে হয়। অর্থাত আপনি তাদের কাছে নির্দিষ্ট পরিমান যায়গা ভাড়া
করছেন।
অনেক প্রতিস্ঠান বিনামুল্যে এই সেবা দেয়। মুলত তারা আয় করে বিজ্ঞাপন বা অন্যভাবে।
ব্লগার
কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস বিনামুল্যের ব্যবস্থা (ডট কম) ব্যবহারের সময় সরাসরি
তাদের সার্ভারে কাজ করতে হয়। নিজস্ব ডোমেনে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারের জন্য
নিজের কম্পিউটারে সাইট তৈরী করে (লোকাল হোষ্ট ব্যবহার করে। এবিষয়ে
টিউটোরিয়াল রয়েছে এই সাইটে) সবকিছু ঠিক থাকার পর তাকে সার্ভারে আপলোড করতে
পারেন। একবার আপলোড করার পর সাইটের পরিবর্তনের কাজগুলি সরাসরি সার্ভারে
করতে পারেন।
যারা
হোষ্টিং সেবা দেন তারা সাধারনত ডোমেন রেজিষ্ট্রেশনে সাহায্য দেন। অনেকেই
তাদের সেবা বিক্রির জন্য কমমুল্যে ডোমেন রেজিষ্ট্রেশন করার ব্যবস্থা রাখেন।
ব্লগ, ষ্ট্যাটিক/ডায়নামিক ওয়েবসাইট
আপনি
কয়েক পাতার একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে অনলাইনে রাখতে চান। বিভিন্ন কোম্পানীর
পরিচিতি তুলে ধরার জন্য যা করা হয়। এগুলি ষ্ট্যাটিক সাইট। নিয়মিতভাবে এগুলি
পরিবর্তণ হয় না।
যদি
নিয়মিতভাবে নতুন নতুন তথ্য যোগ করা, পরিবর্তণ করা, কিংবা ব্যবহারকারীর
ব্যবহারের সময় নানারকম পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকে সেগুলিকে ডায়নামিক সাইট।
অনলাইনে ফরম পুরন করা থেকে শুরু করে কেনাকাটা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা
যায় তার সবকিছুই এধরনের সাইটে করা যায়। বর্তমান যুগে এত বিভিন্ন ধরনের
সাইট রয়েছে যেভানে নির্দিষ্ট ভাগ করা অসম্ভব। তারপরও, একধরনের সাইটকে বলা
হয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম (সিএমএস)। নাম যেমনটা প্রকাশ করে, সেখানে
টেক্সট, ভিডিও, ইমেজ ইত্যাদি বিভিন্ন কন্টেন্ট রাখা হয় এবং নানাভাবে
সেগুলি ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকে। উইকিপিডিয়া এধরনের সাইট।
ওয়েব
+ লগ, সংক্ষেপে ব্লগ আরেক ধরনের সাইট। অনেকটাই অনলাইন ডায়রীর মত। আপনি
দিনের হিসেবে তথ্য যোগ করবেন এবং সেগুলিও তারিখ হিসেবে সাজানো থাকবে। এই
সাইট এধরনের ব্লগ।
ব্লগ
এবং সিএমএস এর মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন। ওয়ার্ডপ্রেস-জুমলা
ইত্যাদি দুকাজেই ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ব্লগার মুলত ব্লগিং এর জন্যই।
আপনি কি করতে পারেন
এই বিষয়গুলি একসাথে করে আপনার স্বাভাবিক প্রশ্ন হতে পারে, এদেরকে কিভাবে কাজে লাগাবেন।
আপনার বিবেচ্য বিষয় হতে পারে এমন;
. আপনি কোন ধরনের সাইট তৈরী করতে চান। সেখানে কি রাখা হবে, কে ব্যবহার করবে ইত্যাদি বিবেচনা করে ঠিক করতে পারেন সাইটের ধরন।
. কোন
সফটঅয়্যার আপনার জন্য বেশি উপযোগি। বিনামুল্যের ব্লগিং এবং সাথে বিজ্ঞাপন
থেকে আয়ের জন্য ব্লগার পছন্দ হতে পারে, আয়ের বিষয় বাদ দিয়ে শুধুমাত্র
ব্লগিং এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস পছন্দ হতে পারে, অথবা আয়ের বিষয় বেশি
গুরুত্বপুর্ন হলে নিজস্ব ডোমেনে ওয়ার্ডপ্রেস হতে পারে। আর ষ্ট্যাটিক সাইট
তৈরীর জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড থেকে শুরু করে এধরনের যে কোন সফটঅয়্যার
ব্যবহার করা যেতে পারে। সহজে সাইট তৈরীর বহু সফটঅয়্যার পাওয়া যায়।
. নিজস্ব
ডোমেন এবং হোষ্টিং প্রয়োজন কতটুকু। ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুটিকেই
বিনামুল্যে ব্যবহার করা যায় আবার নিজস্ব ডোমেন-হোষ্টিং এ ব্যবহার করা যায়।
আপনি ঠিক করতে পারেন আপনার কোনটি প্রয়োজন। উচুমানের সাইট তৈরীতে যেহেতু
অনেক সময় প্রয়োজন হয় সেহেতু বিনামুল্যে শুরু করা ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে।
পরবর্তীতে তাকে নিজস্ব ডোমেনে সরানো যায়। ব্লগার ব্লগকে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে
পরিনত করা যায়।
মোটকথা,
সরাসরি ওয়েবসাইট তৈরীর কাজে হাত না দিয়ে প্রথমে কাগজে-কলমে ঠিক করুন আপনি
ঠিক কি করতে চান। সেজন্য আপনার কি কি প্রয়োজন। কতদিনে তাকে পুর্নাঙ্গ সাইটে
পরিনত করবেন।
0 comments:
Post a Comment
THANKS FOR YOUR CO-OPERATION: